ফিরনি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন বা বিশেষ দিনে খাবার পর মিষ্টি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হলে ফিরনির চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। নরম, সুগন্ধি ও দুধ-চালের অপূর্ব মিশ্রণ এই মিষ্টান্নকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। চলুন, দেখে নিই পারফেক্ট ফিরনি তৈরির সহজ ও ঐতিহ্যবাহী রেসিপি।
ফিরনি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
- সুগন্ধি চাল (বাসমতি/গোবিন্দভোগ) – ½ কাপ
- দুধ – ১ লিটার
- চিনি – ½ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী)
- কনডেন্সড মিল্ক – ¼ কাপ (ঐচ্ছিক)
- এলাচ গুঁড়া – ½ চা চামচ
- কেশর বা জাফরান – ১ চিমটি (ঐচ্ছিক)
- গোলাপ জল – ১ চা চামচ
- পেস্তাবাদাম ও কাজু – কুঁচি করা
- কিসমিস – ১ টেবিল চামচ
- খোয়া ক্ষীর – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
ফিরনি তৈরির সহজ প্রণালী
ধাপ ১: চাল ভিজিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া
প্রথমে সুগন্ধি চাল ভালোভাবে ধুয়ে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর চাল ভালোভাবে ছেঁকে মিহি করে বেটে নিন অথবা ব্লেন্ডারে হালকা গুঁড়ো করে নিন। খুব বেশি গুঁড়ো করলে ফিরনির টেক্সচার ভালো আসবে না, তাই হালকা দানাদার রাখতে হবে।
ধাপ ২: দুধ গরম করা
একটি ভারী তলার হাঁড়িতে দুধ ঢেলে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। দুধ ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন এবং মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন, যাতে দুধ হাঁড়ির তলায় লেগে না যায়।
ধাপ ৩: চালের মিশ্রণ যোগ করা
চাল গুঁড়ো করা মিশ্রণ সামান্য পানি বা দুধে গুলে দুধের মধ্যে ধীরে ধীরে ঢেলে দিন এবং ক্রমাগত নেড়ে যান। এতে যেন কোনো দলা না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ধাপ ৪: মিষ্টি ও সুগন্ধ যোগ করা
চিনি, কনডেন্সড মিল্ক (যদি ব্যবহার করেন), এবং এলাচ গুঁড়া মিশিয়ে নেড়ে দিন। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে জাফরান ও গোলাপ জল যোগ করুন। এরপর কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না ফিরনি ক্রিমের মতো হয়ে আসে।
ধাপ ৫: পরিবেশন ও সাজানো
ফিরনি একবার ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। এরপর সার্ভিং বাটিতে ঢেলে উপর থেকে বাদাম, কিসমিস ও পেস্তার কুচি ছড়িয়ে দিন। ঠান্ডা পরিবেশনের জন্য ফ্রিজে ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিন।
কিছু দরকারি টিপস
- চাল খুব বেশি গুঁড়ো করবেন না, হালকা দানাদার হলে ফিরনির স্বাদ ও টেক্সচার ভালো আসে।
- ফিরনি দুধের সঙ্গে ঘন হতে সময় নেয়, তাই ধৈর্য ধরে নাড়তে হবে।
- চিনি কম বা বেশি করে স্বাদ ঠিক করে নিতে পারেন।
- গোলাপ জল ও কেশর দিলে ফিরনির স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেক ভালো হয়।
- ঠান্ডা পরিবেশন করলে স্বাদ আরও বেশি ভালো লাগে।
ফিরনির পুষ্টিগুণ
- দুধের ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী।
- চালের কার্বোহাইড্রেট শক্তি যোগায়।
- বাদাম ও কিসমিস শরীরের জন্য উপকারী ফ্যাট ও প্রোটিন সরবরাহ করে।
ফিরনি শুধু একটি মিষ্টান্ন নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ। অতিথি আপ্যায়ন, ঈদ, পূজা বা যেকোনো উৎসবে এই মিষ্টি খাবারটি বাড়ির খাবার টেবিলে আলাদা আকর্ষণ যোগ করে। আজই ঘরেই তৈরি করুন এই সুস্বাদু ফিরনি এবং পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ভাগ করে নিন মিষ্টি মুহূর্ত।