শীতকাল এলে সাধারণত সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো রোগ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চীনে যে নতুন ভাইরাসটির প্রভাব দেখানো যাচ্ছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এটি হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) নামে পরিচিত, যা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে শীতকালে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
HMPV কী?
হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) এক ধরনের ভাইরাস যা মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এটি প্যারামিক্সোভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত এবং সাধারণত ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। তবে এটি কিছু ক্ষেত্রে ফুসফুসের সংক্রমণ (নিউমোনিয়া) এবং ব্রঙ্কিওলাইটিস পর্যন্তও সৃষ্টি করতে পারে, যা জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে।
চীনে সাম্প্রতিক সময়ে HMPV-এর প্রভাব
চীনে শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই HMPV-এর প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক জনগণের মধ্যে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
- শিশুদের উপর প্রভাব:
চীনে বর্তমানে শিশুদের মধ্যে HMPV-এর সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।- অনেক শিশুকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হতে হয়েছে।
- কিছু ক্ষেত্রে ফুসফুসের প্রদাহ (নিউমোনিয়া) দেখা যাচ্ছে, যা জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- শিশুদের শ্বাসকষ্ট এবং কাশি অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠছে।
- বয়স্ক জনগণের ঝুঁকি:
- বয়স্ক মানুষদের জন্য HMPV আরও বেশি বিপজ্জনক, কারণ তাদের শ্বাসতন্ত্র দুর্বল থাকে।
- অনেক বৃদ্ধকে অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন পড়ছে।
- স্বাস্থ্যব্যবস্থায় চাপ:
- চীনের হাসপাতালগুলোর উপর চাপ বেড়ে গেছে।
- অন্যান্য শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণের মতো, HMPV-ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে।
HMPV-এর উপসর্গ ও সংক্রমণ ছড়ানোর উপায়
HMPV-এর উপসর্গগুলো সাধারণত ফ্লু বা ঠান্ডার মতোই শুরু হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর আকার ধারণ করে।
প্রধান উপসর্গ:
- গলা ব্যথা
- সর্দি ও কাশি
- জ্বর
- শ্বাসকষ্ট
- ফুসফুসের প্রদাহ (নিউমোনিয়া)
- ব্রঙ্কিওলাইটিস
কীভাবে HMPV ছড়ায়?
HMPV সাধারণত বাতাসে মাইক্রোড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসের অণু ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি, ভাইরাস সংক্রামিত বস্তু যেমন রুমাল, টিস্যু, এবং ফোনের মতো যন্ত্রের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে।
HMPV-এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
বর্তমানে HMPV-এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গ নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- হাত ধোয়া:
নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত খাবার খাওয়ার আগে এবং শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডা-কাশি হলে। - মাস্ক ব্যবহার:
জনবহুল জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। - হাঁচি বা কাশি করার সময় টিস্যু ব্যবহার:
হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় নাকে বা মুখে টিস্যু ব্যবহার করে এবং পরে সেটি সঠিকভাবে Disposal করা উচিত। - জীবাণুমুক্ত করা:
যেসব জিনিস নিয়মিত স্পর্শ করা হয়, সেগুলো জীবাণুমুক্ত করা।
চিকিৎসা:
- শ্বাসকষ্ট বা জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- সাধারণ প্যারাসিটামল এবং ইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে উপসর্গ কমাতে।
- গুরুতর শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
চীনের পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। শীতকালীন মৌসুমে HMPV-এর প্রকোপ বাংলাদেশেও দেখা দিতে পারে।
- জনসাধারণকে সচেতন করা:
HMPV নিয়ে জনগণকে জানানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করা। - স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রস্তুতি:
হাসপাতালগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রাখা উচিত। - শিশু এবং বয়স্কদের সুরক্ষা:
বিশেষত শিশু এবং বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
চূড়ান্ত কথা
চীনে HMPV-এর প্রকোপ একটি বড় ঝুঁকি হয়ে উঠেছে, এবং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসটির প্রভাব বৃদ্ধি পেলে তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এ সময় আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সতর্কতা আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে শীতকালীন সংক্রমণ রোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

