সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া রুচি

ফ্যাশন ও স্টাইল শুধু পোশাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। কেমন পোশাক পরছি, কোন রঙের সঙ্গে কোন রং মিলিয়ে নিচ্ছি, কেমন জুতা, ঘড়ি, ব্যাগ ব্যবহার করছি—সবই আমাদের স্টাইল স্টেটমেন্টের অংশ। সময়ের সঙ্গে মানুষের ফ্যাশন বদলায়, কিন্তু সত্যিকারের স্টাইল কখনোই পুরনো হয় না। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ফ্যাশন ও স্টাইলের নানা দিক।


ফ্যাশন ও স্টাইলের পার্থক্য:

অনেকেই মনে করেন, ফ্যাশন আর স্টাইল একই জিনিস। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।

  • ফ্যাশন হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রচলিত ট্রেন্ড, যা পরিবর্তনশীল।
  • স্টাইল হলো একক ও ব্যক্তিগত, যা আপনার নিজস্বতা তুলে ধরে।

ফ্যাশন ফলো করা সহজ, কিন্তু স্টাইল তৈরি করতে হলে ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া থাকা জরুরি। স্টাইল হলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের পছন্দকে উপস্থাপন করা।


ফ্যাশনের বিবর্তন:

ফ্যাশনের ইতিহাস বহু পুরনো। সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ফ্যাশনের ধরন বদলেছে।

  • প্রাচীন যুগ: পোশাক ছিল শুধু প্রয়োজন মেটানোর জন্য।
  • মধ্যযুগ: রাজা-রানিদের রাজকীয় পোশাকের প্রচলন শুরু হয়।
  • ১৮-১৯ শতক: ইউরোপীয় ধাঁচের পোশাক জনপ্রিয় হতে থাকে।
  • ২০ শতক: বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, ডিজাইনারদের আবির্ভাব ঘটে।
  • বর্তমান যুগ: ফিউশন ফ্যাশনের বিস্তার।

প্রত্যেক যুগেই নতুন নতুন ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে, কিন্তু কিছু স্টাইল এখনো টিকে আছে যা কখনোই পুরনো হয় না।


পুরুষদের ফ্যাশন ও স্টাইল:

১. ফর্মাল স্টাইল:

  • ব্লেজার, স্যুট, টাই, লেদার শু, ঘড়ি—সব মিলিয়ে ফরমাল লুক।
  • অফিস বা কর্পোরেট ইভেন্টের জন্য পারফেক্ট।

২. ক্যাজুয়াল স্টাইল:

  • জিন্স, টি-শার্ট, স্নিকার্স, ক্যাপ, সানগ্লাস—স্ট্রিট ফ্যাশনের জন্য আদর্শ।
  • সাধারণ ঘোরাঘুরি, বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় মানানসই।

৩. এথলিজার:

  • জিম বা স্পোর্টসওয়্যারকে স্টাইলিশভাবে ক্যারি করা।
  • ট্র্যাকস্যুট, জগার প্যান্ট, স্নিকার্স, হুডি ইত্যাদি।

নারীদের ফ্যাশন ও স্টাইল:

১. ট্র্যাডিশনাল লুক:

  • শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, লেহেঙ্গা, কুর্তি ইত্যাদি।
  • বিয়েবাড়ি, পার্টি বা উৎসবে ট্র্যাডিশনাল লুক দারুণ মানায়।

২. ওয়েস্টার্ন স্টাইল:

  • জিন্স-টপ, স্কার্ট, ওয়ান পিস, ব্লেজার ইত্যাদি।
  • অফিস, কলেজ বা ক্যাজুয়াল ডে আউটিংয়ের জন্য আদর্শ।

৩. ফিউশন ফ্যাশন:

  • ট্র্যাডিশনাল ও ওয়েস্টার্নের মিশেলে অনন্য স্টাইল।
  • যেমন: শাড়ির সঙ্গে বেল্ট, কুর্তির সঙ্গে জিন্স ইত্যাদি।

ফ্যাশন টিপস:

✅ নিজের গায়ের রঙ ও বডি শেপ অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করুন।
✅ মানানসই এক্সেসরিজ ব্যবহার করুন, যেমন ঘড়ি, সানগ্লাস, ব্যাগ।
✅ খুব বেশি ট্রেন্ড ফলো করতে গিয়ে নিজের স্বাভাবিক স্টাইল হারাবেন না।
✅ আরামদায়ক পোশাক বেছে নিন, যাতে আত্মবিশ্বাস বজায় থাকে।
✅ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই সুগন্ধি ব্যবহার করুন।


সিজনাল ফ্যাশন:

  • গ্রীষ্মকাল: হালকা ও আরামদায়ক পোশাক, সুতি বা লিনেন কাপড়।
  • শীতকাল: উলের সোয়েটার, জ্যাকেট, ওভারকোট, বুট।
  • বর্ষাকাল: রেইনকোট, ওয়াটারপ্রুফ জুতো, ফ্যাশনেবল ছাতা।

বাংলাদেশের ফ্যাশন ট্রেন্ড:

বাংলাদেশে ফ্যাশনের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। তরুণ প্রজন্ম ফিউশন ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকছে।

পাঞ্জাবি ও জিন্সশাড়ি ও ওয়েস্টার্ন টপকুর্তি ও পালাজোস্নিকার্স ও ট্র্যাডিশনাল পোশাকের মিশ্রণ


ফ্যাশন পরিবর্তনশীল, কিন্তু স্টাইল ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন। তাই নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে ফ্যাশন ও স্টাইলের মধ্যে ব্যালেন্স করুন। আত্মবিশ্বাসই হলো আসল স্টাইল। তাই যা-ই পরুন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরুন!

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *